নয়টি ক্রীড়া ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সার্চ কমিটি। তা-ও প্রায় সপ্তাহ তিনেক আগের কথা। অথচ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি গতকাল পর্যন্তও! কমিটিগুলো ঘোষণা করা না হলেও বাকি কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব প্রস্তুত। আশা করছি, আগামীকালই (আজ) অ্যাডহক কমিটিগুলো ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। বিলম্ব যা হওয়ার হয়েছে; আর হবে না।’
বিলম্ব আর না হলেই ভালো। কারণ, সার্চ কমিটি তাকিয়ে আছে এই কমিটিগুলো ঘোষণার দিকেই। কমিটির আহ্বায়ক সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক দিন আগে নয়টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠন করে প্রস্তাব আকারে সরকারের কাছে পেশ করেছি। এগুলো আগে ঘোষণা করা হোক। তারপর বাকিগুলোর অ্যাডহক কমিটি জমা দেব। আমরা আরও ১২-১৩টি ফেডারেশনের খসড়া অ্যাডহক কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে রেখেছি।’
কোন নয়টি ফেডারেশনে কমিটি প্রস্তাব আকারে জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর নাম প্রকাশ করছে না সার্চ কমিটি। তবে সূত্র জানিয়েছে, তালিকায় আছে হকি, কাবাডি, অ্যাথলেটিকস, দাবা, বাস্কেটবল, বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার, টেনিস, স্কোয়াশ ও ব্রিজ। কমিটি ঘোষণায় বিলম্বের কারণ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিতে সময় নিয়েছে। তা ছাড়া যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও কয়েক দিন দেশের বাইরে ছিলেন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই তিন মাস ফুটবল ও ক্রিকেট চলেছে তাদের নিজস্ব সূচিতে। সাঁতার ফেডারেশন মাত্রই জাতীয় সাঁতার শেষ করেছে। হ্যান্ডবলে স্কুল টুর্নামেন্ট এবং ভারোত্তোলনে ক্লাব টুর্নামেন্ট হয়েছে। আরও দু–একটি ছাড়া বাকি ফেডারেশনগুলোর দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড নেই।
গত ২১ আগস্ট ভেঙে দেওয়া হয় সারা দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা ও বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। হাত পড়ে ঢাকার ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতেও। ১০ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে একসঙ্গে ৪২টি ফেডারেশনের সভাপতিকে অব্যাহতি দেয়।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
তার আগে অব্যাহতি পান তিন ফেডারেশনের সভাপতি ও এক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। দুই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন। কয়েকটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আছেন আত্মগোপনে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেডারেশনগুলোতে সংস্কারের অংশ হিসেবে বর্তমান কমিটি বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হবে।
সেই লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৩০ আগস্ট ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে। কমিটিকে দুই মাস দেওয়া হলেও পেরিয়ে গেছে প্রায় আড়াই মাস; কিন্তু এখনো নতুন নেতৃত্ব পায়নি ক্রীড়াঙ্গন।
জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গেও বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে সার্চ কমিটি। মূলত কমিটির সদস্যরা আলোচনায় বসবেন আটটি বিভাগের সঙ্গে।
সার্চ কমিটি ফুটবল, ক্রিকেট ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ছাড়া বাকি ৫২টি ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়-কর্মকর্তা, কোচ, রেফারিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে, তাঁদের পরামর্শ নিয়েছে। সেখানে ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্রের ভুল-ত্রুটি নিয়েই কথা বলেছে বেশি। সেই আলোকেই সার্চ কমিটি অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের নাম সুপারিশ করেছে। তবে সূত্র জানিয়েছে, সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম থেকে সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।
ওদিকে সার্চ কমিটি জানিয়েছে, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গেও বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। মূলত কমিটির সদস্যরা আলোচনায় বসবেন আটটি বিভাগের সঙ্গে। সার্চ কমিটি যখন যে বিভাগে যাবে, সেখানে সে বিভাগের অধীনস্থ জেলাগুলোকেও ডাকা হবে।
এ বিষয়ে জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা জেলা ও বিভাগীয় অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি করব না। এগুলো সরকারই করবে। তবে আমরা জেলা ও বিভাগের গঠনতন্ত্র নিয়ে কথা বলব। যাতে তারা নির্বাচন করতে পারে। জেলাগুলোর নির্বাচন না হলে ঢাকায় ফেডারেশনের নির্বাচনও করা যাবে না।’