বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে মিডিয়াগুলো যখনই প্রশ্ন করেছে বলেছি, আমরা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলাম না। বরং আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, ভারতের সহযোগিতায় যদি দেশ স্বাধীন হয় তাহলে স্বাধীনতার সঠিক সুফল পাওয়া যাবে না।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, “আমরা এ-ও বলেছিলাম যে জামায়াতে ইসলামীর ভারতে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামের আগে ‘মওলানা’ ছিল। তিনি তো গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শরিক হওয়ার জন্য। তিনি ভারত ছেড়ে বাধ্য হয়েছেন আবার পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতে। তার ‘মওলানা’ নামটাকে সহ্য করা হয়নি। আর জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকে ভারত মুক্তিযুদ্ধ করার সুযোগ দিতো এটা কোনো বোকা স্বপ্নেও ভাববে না এবং কেউ বলবেও না।”
তিনি বলেন, “তাহলে জামায়াত কী করবে? জামায়াত ছিল বাংলাদেশে। তখনও পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে ছিল। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলেও সবার বেতন পাকিস্তান সরকার থেকেও হতো। সুতরাং সেসময় শুধু জামায়াত না, যারাই এই যুদ্ধকে দীর্ঘকালীন সংকট মনে করতো তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। তারা সবাই ছিল এক পাকিস্তান রাখার পক্ষে এবং এটা শেখ মুজিব সাহেবও চেয়েছিলেন।”
জামায়াতের এই আমির বলেন, “শেখ মুজিব সাহেব কীসের সংলাপ করেছিলেন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ভুট্টু ও ইয়াহইয়া খানের সঙ্গে? তিনি কি ডায়ালগ করেছিলেন? শান্তিতে কীভাবে দেশ স্বাধীন হয়? সেই মেসেজ তো জাতির সামনে আজও কেউ উপস্থাপন করতে পারলো না। তিনি তো ডায়ালগ করেছিলেন তার হাতে তার দলের হাতে ক্ষমতা দেয়ার জন্য। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তো স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য গ্রেফতার হননি।”
তিনি বলেন, “শেখ মুজিবের সহযোগী তাজউদ্দীন ড্রাফট করে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য। শেখ মুজিব বলেছিলেন, তোমরা কি আমাকে আবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দাঁড় করাতে চাও? তো আমাদের যে অবস্থান ছিল শেখ মুজিব সাহেবের একই অবস্থান ছিল।”
জামায়াতের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তখন চেয়েছিলাম যদি দেশ স্বাধীন করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের পূর্ণশক্তিতে স্বাধীন করতে হবে। তাহলে মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল লাভ করবে। আমাদের আশঙ্কার যে জায়গা ছিল, ৫৩ বছর কী তার প্রমাণ করলো? এখন তো লোকেরা বলে আপনারা যে আশঙ্কা করেছিলেন এখন তো তার চাইতেও খারাপ।”
তিনি বলেন, “একটা স্বাধীন দেশে আরেকটা দেশের পররাষ্ট্র সচিব এসে বলে কোন দল ইলেকশনে যাবে আর কোন দলে যাবে না। কে কার সাথে অ্যালাইন্স করবে; কে সরকার গঠন করবে। এটা কি আরেকটা দেশের কাজ? এভাবে যদি হয় তাহলে একটা দেশের স্বাধীনতার মর্যাদাবোধটা কোথায় থাকে? ফারাক্কা বাঁধ হলো, তিস্তা চুক্তির সমাধান হলো না, ফেলানি শেষ পর্যন্ত কোনো ন্যায় বিচার পেলো না। আমরা এসবেরই আশঙ্কা করেছিলাম।”
সবশেষ তিনি বলেন, “এটা সঠিক যে জামায়াত চেয়েছিল এক পাকিস্তান। তবে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন এবং নানা ধরনের অপকর্মের কারণে সারা জাতি ফুঁসে উঠেছিল, মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা আমাদের কলিজা দিয়ে ভালোবেসে কবুল করে নিয়েছি। আমাদের তখনকার চিন্তা বিজয়ী হয়নি। সেইসময় আমাদের চিন্তা পরাজিত হয়েছে। এখন জনগণ মূল্যায়ন করবে যে আমাদের সেই সময়ের ভূমিকা কতটা যথার্থ ছিল।”
স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা ছিল না বলে দাবি করা হলেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অভিযুক্ত দলটি। এমনকি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকালে মানবতাবিরোধী একাধিক অপরাধে জামায়াতের কয়েকজন নেতার কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। যদিও সেসব রায় নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।