গত বুধবার (২০ নভেম্বর ) বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সেই দুঃসংবাদ। যার জন্য কেউই অপেক্ষায় ছিলেন না। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের মানুষ। তাজুল ইসলাম আটক হওয়া আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত গুমঘরের প্রধান হোতা আটক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বরাতে জানালেন, জিয়াউলের নেতৃত্বে এম ইলিয়াস আলীকে গুমের পর হত্যা করা হয়েছে। এ কথা জিয়াউল আহসান জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। যা তিনি আদালতকেও জানিয়েছেন।
এ তথ্য জানার পর এতদিন সবার মনে যে আশা ও সম্ভাবনার বাতি নিভু নিভু করে জ্বলছিল, তাও নিভে গেছে। এবার পানির মতো স্পষ্ট হয়ে গেল শেষমেশ কী ঘটেছে গুম হওয়া এম ইলিয়াস আলীর ভাগ্যে। পতিত সরকারের অন্ধকার গুমঘরে থেকে একটি সাহসী রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়ে গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে পরিবার ও দলের অপেক্ষার দিন শেষ হয়ে গেল।
খবর নিশ্চিত হওয়ার পর সিলেটে এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। নেতাকর্মী ও ইলিয়াসভক্তদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। ইলিয়াস আলী ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি। ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং সিলেট অঞ্চলের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় নেতা।
গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গুমঘর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছিলেন বন্দি হওয়া রাজনৈতিক নেতারা। সবাই বের হলেও অনেকে ছিলেন অজানায়। ছিলেন না তারা গুমঘরেও। কী ঘটেছে তাদের ভাগ্যে এই প্রশ্ন যখন সর্বত্র তখন আশায় বুক বেঁধে বসেছিলেন গুম নেতা ও অন্যদের পরিবারের সদস্যরা। এরই মধ্যে অনেকের ব্যাপারে জানাও গিয়েছিল, কী পরিণতি হয়েছে তাদের ভাগ্যে।
কিন্তু জানা যাচ্ছিল না এম ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে।অবসর নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা দাবিদার একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে জানান, এম ইলিয়াস আলীকে গুমের কয়েকদিনের মাথায়ই হত্যা করা হয়েছে। সাগরে নিয়ে খাবার বানানো হয়েছে মাছের। কাজটা করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং জিয়াউল আহসানের মাধ্যমেই। কিন্তু নির্ভরযোগ্য সোর্স না হওয়ায় কেউই সে কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
তখন আবার আলোচনায় উঠে আসে এম ইলিয়াস আলীর গুম থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি। সিলেট ও তার নির্বাচনি এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা আবার সরব হন তাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে। তারা মিছিল-মিটিংও করেন। এ সময় ইলিয়াসপত্নী তাহমিনা রুশদীর লুনার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ওই ইস্যুর আলোচনা এবং ইলিয়াস আলী ফেরত আসার প্রত্যাশা সাধারণ মানুুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিখোঁজের পর দীর্ঘ ১২ বছর ইলিয়াস আলীর পরিবার ও বিএনপি তার ফেরার ব্যাপারে আশাবাদ দেখালেও তারা জানতেন, ইলিয়াস আলীকে গুমের পরপরই হাসিনা সরকার তাকে হত্যা করেছে।
ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে ইলিয়াস আলী বেঁচে থাকার আশা মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। কেননা সিলেটের মানুষ ইলিয়াস আলী নিয়ে অনেক আবেগী।দলমতের ঊর্ধ্বে প্রায় প্রত্যেকেই তাকে পছন্দ করতেন। নিখোঁজের পর তাকে ফেরত পাওয়ার জন্য কয়েকদিনের আন্দোলনে তার নির্বাচনি এলাকার অন্তত ৫ জন প্রাণ দিয়েছিলেন।