ভিনিসিয়ুস: রিয়ালের জার্সিতে হিরো, ব্রাজিলে জিরো

জার্সি বদলাতেই কি একজন ফুটবলার আমূল বদলে যেতে পারেন? ইতিহাসে এমন অনেক ফুটবলার পাওয়া যাবে, যাঁরা ক্লাবের জার্সিতে ভালো খেলেন তো জাতীয় দলের জার্সিতে ফ্লপ। আবার উল্টো উদাহরণও পাওয়া যাবে ঢের। লিওনেল মেসির কথাই ধরা যাক, ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জেতার আগ পর্যন্ত ‘জাতীয় দলে ফ্লপ’ হিসেবে দেখা হতো মেসিকে।

টানা ব্যর্থতার কারণেই ক্যারিয়ারের লম্বা সময় এই বোঝা টানতে হয়েছিল আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে। তবে গত চার বছরের পারফরম্যান্সে সেইসব নেতিবাচক তকমা ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলেছেন মেসি। এই লেখা অবশ্য মেসিকে নিয়ে নয়, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে নিয়ে।

যার পারফরম্যান্স অনেকটা ২০২১–পূর্ব মেসির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। ক্লাবের জার্সিতে দুর্দান্ত ভিনি জাতীয় দলে যোগ দিতেই নখদন্তহীন বাঘে পরিণত হন। অভিষেকের পর থেকেই এমন বিপরীতমুখী যাত্রার ধারা অব্যাহত রেখেছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। সর্বশেষ এই চিত্র দেখা গেছে আজ ভোরে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ব্রাজিলের ১–১ গোলে ড্র করা ম্যাচেও। অবিশ্বাস্য ফর্ম নিয়ে জাতীয় দলে এসে ভিনি দেখালেন সেই একই ‘ফ্লপ শো’।  

গত তিন সপ্তাহ ধরেই অবশ্য রোলার কোস্টার একসময় পার করছেন ভিনিসিয়ুস। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অল্পের জন্য ব্যালন ডি’অরের মুকুট হাত ছাড়া করেন স্পেনের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রির কাছে। তা–ও মাত্র ৪১ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায়। এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার রেশ এখনো চলছে। এর মধ্যেই গত সপ্তাহে লা লিগায় রিয়ালের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেছেন ওসাসুনার বিপক্ষে। আর হ্যাটট্রিকের সেই সুখস্মৃতি নিয়েই যোগ দেন জাতীয় দলে।

কিন্তু ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে তুলতেই আমূল বদলে গেলেন ভিনি। সেই ড. জেকিল আর মিস্টার হাইডের গল্পের মতো। আগ্রাসী আর বিধ্বংসী রূপ হারিয়ে ভিনি হয়ে গেছেন অচেনা একজন। আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পথে যে খেলোয়াড়টি চোখধাঁধানো দুটি গোল করেছেন, সেই মানুষটিই আজ ব্রাজিল–ভেনেজুয়েলা ম্যাচের ৬৩ মিনিটে দৃষ্টিকটূভাবে পেনাল্টি মিস করেছেন।

এমনকি রিবাউন্ড থেকে দ্বিতীয়বার সহজ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। মাঠের খেলায় না হয় নানা ধরনের কৌশল ও সমন্বয়ের ব্যাপার থাকে, কিন্তু পেনাল্টি তো ওয়ান টু ওয়ানের লড়াই। সেখানে কীভাবে এমন আমূল বদলে গেলেন ভিনি!

ভিনির পেনাল্টি মিসের পরিসংখ্যানও কথা বলছে সমালোচকদের পক্ষে। রিয়ালের হয়ে এখন পর্যন্ত ৬টি পেনাল্টি নিয়ে একটিও মিস করেননি ভিনি। অর্থাৎ ৬ পেনাল্টির সবগুলো থেকেই আদায় করে নিয়েছেন গোল। বিপরীতে ব্রাজিলের দুটি পেনাল্টি নিয়ে মিস করেছেন একটি। রিয়ালের হয়ে ভিনির শতভাগ পারফর‍ম্যান্স, রিয়ালের জার্সিতে পঞ্চাশ!

এ ছাড়া গোলের পরিসংখ্যানও ব্রাজিলের জার্সিতে সাদামাটা এক ভিনিসিয়ুসকে সামনে নিয়ে আসে। ২০১৯ সালে ব্রাজিলের হয়ে অভিষেকের পর ৩৫ ম্যাচে ভিনিসিয়ুস গোল করেছেন মাত্র ৫টি। সেই একই ব্যক্তি শুধু চলতি মৌসুমেই রিয়ালের হয়ে ১৭ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল, সঙ্গে আছে ৭টি অ্যাসিস্টও। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ব্রাজিল ও রিয়ালের ভিনি মোটেই এক ব্যক্তি নন!

পারফর‍ম্যান্সের বিচারে দুজন যেন দুই মেরুর মানুষ। এমনকি তাঁরা যেন এমন দুজন মানুষ যাঁদের একজনের সঙ্গে অন্যের পরিচয়ও নেই। অথচ এমন নয় যে ভিনি সাদামাটা কোনো জাতীয় খেলেন। ৫ বারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলে তাঁর আশপাশে খেলেন রদ্রিগো, রাফিনিয়া, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি কিংবা সাভিনিওর মতো তারকারা।

কিন্তু এরপরও নিজেকে ঠিকঠাক মেলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন ভিনি। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে ব্রাজিলকে। দ্রুত হলুদ জার্সির এই আড়াল ভেঙে ভিনিসিয়ুস বেরিয়ে আসতে না পারলে সেটা ব্রাজিলের জন্য বিয়োগান্তক এক অধ্যায়ই হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *